(আনুমানিক পড়ার সময় ৩ মিনিট)
ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম জুন-জুলাই হতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি টাইপের যেকোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে। শরীরে প্রবেশের পর এ ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রদাহের সৃষ্টি করে। বড়দের মতো শিশুরাও এ সময় আক্রান্ত হয়। বড়দের সঙ্গে শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ-উপসর্গে কিছু অমিল আছে। বাচ্চাদের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ সচরাচর ধরা পড়ে না। বাচ্চা যত ছোট হয় তার লক্ষণ ততই সাংঘাতিক হয় কারণ সংক্রমণ হওয়ার কিছুদিন পর সেই লক্ষণ সনাক্ত করা যায়। শিশুরা অল্প সময়ের মধ্যেই রোগের জটিলতা এবং ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এটা তাদের নাজুক শারীরিক গড়ন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার কম ক্ষমতা বা জটিলতার ঝুঁকি সামলানোর অপরিপক্বতার জন্যই হয়ে থাকে।
বাচ্চাদের মধ্যে দেখা ডেঙ্গু রোগের কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করা হল, যেগুলির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা উচিত-
ফ্লু –সদৃশ অসুস্থতাঃ
আপনার বাচ্চার যদি উচ্চ তাপমাত্রা সহ জ্বর থাকে, নাক বইতে থাকে ও কাশি থাকে, তাহলে তা ডেঙ্গুর লক্ষণ হতে পারে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষণের মাধ্যেমে সেই জ্বর আসলে ডেঙ্গু কি না, তা সনাক্ত করা উচিত।
শিশুর ব্যবহারে পরিবর্তনঃ
বয়স্ক মানুষের তুলনায়, স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চারা বুঝতে অক্ষম হয় যে তাদের শরীরে বাস্তবিক কি সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে বাচ্চাদের মধ্যে বিরক্তিভাব ও ব্যবহারিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ওরা খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যায়। খাবারে অরুচি, বমি ভাব বা বমি হয়। এ সময় শিশুরা নিস্তেজ হয়ে পরে।
শারীরিক সমস্যাঃ
ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে হাড়ের জয়েন্টে গুরুতর ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা, মাথায় ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, পালস কমে যাওয়া, পেটেব্যথা সঙ্গে পাতলা পায়খানা, কালো রঙের পায়খানা, ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হওয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। বাচ্চাদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার বিষয়ে যথাসম্ভব জানার চেষ্টা করুন, যাতে আপনি ডাক্তারের সাথে সেই অনুযায়ী আলোচনা করতে পারেন।
ত্বকের সমস্যাঃ
ডেঙ্গু হওয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যে সমস্যা দেখা যায় তা হল ত্বকে র্যাশ হওয়া। এর আরও একটি লক্ষণ হল ক্রমাগত চুলকানো।
রক্তক্ষরণঃ
প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, এই রোগে বাচ্চাদের মাড়ি ও নাক থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এ থেকে হেমারেজ কিংবা শক সিন্ড্রম হতে পারে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
সাবধানতা-
* বাড়ীর আশপাশ পরিষ্কার রাখুন
* আশপাশের জমাবদ্ধ পানি অপসারণ করুন
* মশারি টানিয়ে ঘুমান
* হালকা রঙের ফুল হাতা কাপড় পড়ুন
* প্রয়োজনে মশানাশক ঔষধ ব্যবহার করুন
* ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থাকলে তাকে মশারির মধ্যে রাখুন
* এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলায় সাবধানে থাকতে হবে।
আপনার বাচ্চার মধ্যে যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলি দেখা যায়, তাহলে নিম্ন পদক্ষেপগুলি নেওয়া উচিত-
* তৎক্ষণাৎ শিশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন
* আপনার বাচ্চা যদি মায়ের দুধ পান করে, তাহলে একবারের জন্যেও তা যেন বাদ না যায়।
* কিছুক্ষণ পরপর শিশুকে পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন, স্বাস্থ্যসম্মত জুস, লেবুর শরবত ইত্যাদি দিন।
* খাওয়ার রুচি না থাকায় বাচ্চাকে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য যেমন সুপ, খিচুড়ি, সেদ্ধ সবজি ইত্যাদি দিন।
* ভেজানো কাপড় কিংবা স্পঞ্জ ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
* জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, সিরাপ বা সাপোজিটরি ব্যবহার করুন।
* শিশুর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে ‘নো ওয়ার্ক’, ‘নো প্লে’, ‘নো স্কুল’ নীতিতে চলুন। প্রয়োজন হাসপাতালে ভর্তি করুন।
ডেঙ্গু সনাক্তকারী পরীক্ষা-
* Platelet count দেখতে CBC (Complete Blood Count) এবং
* ডেঙ্গু শনাক্ত করতে Dengue NS1 Antigen
ডেঙ্গু রোগের টিকা-
WHO (World Health Organization) এর তথ্য মতে বিশ্বে একমাত্র লাইসেন্স প্রাপ্ত টিকা হল Sanofi Pasteur এর CYD-TDV (Dengvaxia)। ডেঙ্গু রোগের টিকার ব্যাবহার এবং মাত্রাগত জতিলতা থাকায় শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে তেমন ভয়ের কিছু নেই, তবে ডেঙ্গুর জটিলতাগুলো খারাপ রূপ নিতে পারে। শিশুদের নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়িতে রক্তপাত, যকৃৎ একটু বড় হওয়া ইত্যাদি জটিলতা দেখা যায়। পানির অভাবে শিশুরা দ্রুত পানিশূন্যতায় ভোগে। রক্ত সংবহন নালিগুলো অধিকতর নাজুক হওয়ায় শিশুদের শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মনে রাখা দরকার, জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পরেও শিশু সংকটপূর্ণ অবস্থায় চলে যেতে পারে। তাই জ্বর কমে গেলেও শিশুর প্রতি নজর দিতে হবে।
শিশুর ডেঙ্গু হলে ঘাবড়ে না গিয়ে সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা নিন।
কারো সোনামণির যেন ডেঙ্গু না হয় সেই কামনা করি।
সুস্থ থাকুক আপনার সন্তান। ❤️