(আনুমানিক পড়ার সময় ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড)
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে, বেশিরভাগ মহিলারা বমি বমি ভাব, অবসন্নতা, স্তনের ব্যথা ইত্যাদি অনুভব করে তবে সমস্ত মহিলারা এই লক্ষণগুলি অনুভব করবেন না কারণ এই সময়ের মধ্যে এই লক্ষণগুলি খুব হালকা থাকে। বেশিরভাগ মহিলারা পিরিয়ড মিস করার পরে তাদের গর্ভধারণের ব্যাপারে সন্দেহ করে বা জানতে পারে।
কিছু মহিলারা গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে দাগ কাটা লক্ষ্য করে থাকে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি স্বাভাবিক মনে হয়। যদি আপনি গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে দাগ পড়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন সেক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।
লক্ষণ ও উপসর্গঃ
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে, আপনি নির্দিষ্ট উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেন। যদিও এগুলি প্রাক-মাসিকের লক্ষণগুলির মতোই। সেকারণে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে এই সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী –
১. পিরিয়ড না হওয়া
পিরিয়ড মিস করা গর্ভাবস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। একজন মহিলা গর্ভধারণ করলে তার দেহ প্রজেস্টেরন হরমোন রিলিজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি পিরিয়ড বন্ধ করার জন্যও দায়ী। পিরিয়ড মিস করা গর্ভাবস্থার প্রথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
২. সামান্য স্পটিং
ডিম নিষিক্তকরণের প্রক্রিয়াতে যখন জরায়ুতে নিজেকে যুক্ত করে, তখন কিছু পরিমাণ বাধা এবং দাগ কাটতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনার যৌনাঙ্গে ধোয়া বা মুছার সময় এটি দেখতে পারেন। যদিও গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের রক্তপাত বা দাগ দেখা দেওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক, তবে অস্বাভাবিক রক্ত বা দাগ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিত্সকের সহায়তা নিন।
৩. সংবেদনশীল স্তন
আপনার স্তনটি স্পর্শে ব্যথা বোধ করা বা সংবেদনশীল হওয়া। যদিও এই লক্ষণটি প্রাক-মাসিকের লক্ষণগুলির সাথে বেশ মিল। আপনার স্তনের নিপলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলটি কালচে হতে পারে এবং স্তনের শিরাগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে।
৪. মেজাজ পরিবর্তন
শরীরে বড় ধরনের হরমোনাল পরিবর্তনগুলির কারণে আপনার মেজাজটি দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। হয়তো এই মুহূর্তে আপনি খুশি বোধ করছেন কিন্তু পরের মুহূর্তে আপনার হতাশার অনুভূতি জাগতে পারে। এগুলো গর্ভাবস্থার খুব সাধারণ লক্ষণ।
৫. ঘন ঘন লু ট্রিপস (টয়লেটে যাওয়া)
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে হরমোনের পরিবর্তনগুলি দ্রুত হয় এবং ফলস্বরূপ পেলভিক (শ্রোণী) অঞ্চলে বেশি রক্ত প্রবাহিত হবে। এটি ভ্রূণের সর্বোত্তম বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য জরায়ু আস্তরণকে ঘন করতে সহায়তা করে। শরীরের বর্ধিত তরলগুলি পরিচালনা করতে কিডনির কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। হরমোনগত পরিবর্তন এবং কিডনির কার্যক্রমের পরিবর্তন মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়িতে পারে।
৬. ক্লান্তি
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক মাসগুলিতে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত এবং শক্তি কম পেতে পারেন। ক্লান্তির কারণে ঘুম ঘুম অনুভূত হতে পারে।
৭. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
নতুন করে কিছু খাবারের প্রতি আপনার ভালোলাগা সৃষ্টি হতে পারে এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি অনিহা আসতে পারে। আপনার পছন্দসই খাবারের প্রতি বিরূপতা তৈরি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক এবং অপছন্দের খাবারে আগ্রহ বা ভালো লাগা সৃষ্টি হতে পারে।
৮. প্রাতঃকালীন অসুস্থতা
বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন। সাধারণত প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে এই অনুভূতি হয়ে থাকে। কিছু মহিলা সারা দিন বমি বমি ভাব বোধ করে থাকে এবং অনেকে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বমি বমি অনুভব করে থাকেন।
৯. অম্বল (বুক-গলাজ্বালা)
গর্ভাবস্থায় বুক-গলাজ্বালা খুব স্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি অ্যাসিড রিফ্লাক্স (প্রতি প্রবাহ) এবং অম্বলের জন্য দায়ী। গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে হার্ট বার্ন খুব সাধারণ বিষয় ন বাড়ন্ত বাচ্চা নিজেই পেট ঠেলে দেয় এবং পেটের অ্যাসিড খাদ্যনালীতে ফিরে আসে।
১০. প্রখর ঘ্রাণশক্তি
অনেক মহিলার গর্ভাবস্থায় ঘ্রাণের তীব্রতা অনুভব করেন। এর মধ্যে কিছু ঘ্রাণ আপনার পছন্দ হতে পারে এবং কিছু ঘ্রাণ (গন্ধ) আপনার ভালো লাগবে না।
১১. অনিয়মিত হজম (পরিপাক)
দেহে প্রোজেস্টেরনের বর্ধিত মাত্রা বিভিন্ন পেশীগুলির কার্যকারিতা পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিত হরমোন স্তর পেশীগুলিকে ধীরে ধীরে কাজ করতে উৎসাহিত করে এবং এভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ধীর হয়ে যায় যা অনিয়মিত অন্ত্রের গতি বা কোষ্ঠকাঠিন্যে রূপ নেয়।
১২. মাথা-ঘোরা
প্রোজেস্টেরনের উপস্থিতি রক্তচাপ কমাতে পারে এবং আপনার মাথা ঘোরার অনুভতি হতে পারে।
১৩. পিঠে ব্যাথা
শরীরে প্রজেস্টেরনের বর্ধমান মাত্রার ফলস্বরূপ গর্ভাবস্থায় শ্রোণী অঞ্চলকে আচ্ছাদিত করে থাকা লিগামেন্টগুলি আলগা হয়ে যায়। আপনার পিঠ এবং কোমরের এই শিথিল লিগামেন্টগুলির কারণে পেছনে ব্যথা হতে পারে।
১৪. অতিরিক্ত ক্ষুধা বোধ
সঠিক ডায়েট গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত হয়ে উঠতে পারেন এবং খাদ্যের জন্য উদগ্রীব হতে পারেন।
১৫. মাথাব্যাথা
আপনার গর্ভাবস্থার শুরুতে, আপনার দেহের অভ্যন্তরে অনেকগুলি পরিবর্তন হবে। বর্ধিত হরমোন, রক্তের পরিমাণ এবং স্ট্রেস এর কারণে ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে পারে।
এগুলো গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণসমুহু। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আপনি এই লক্ষণগুলো অনুভব করবেন। এই লক্ষণগুলোর পাশাপাশি, শরীরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন। অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছবিঃ ইমেজেসবাজার।