(আনুমানিক পড়ার সময় ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড)
বর্ষার সময়টাতে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশা দ্বারা পরিবাহিত হয়। পরিত্যক্ত বা নির্মাণ কাজের স্থানে থাকা বালতিতে, ড্রামে, চৌবাচ্চায় বা ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃষ্টির কারণেও এডিস মশা বৃদ্ধি পায়।
এসময়ে বড়রা এবং শিশুরা এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, শিশু ও পূর্ণবয়স্ক মানুষ খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে মানুষের মৃত্যু হতে পারে তাই অতিরিক্ত সচেতনতা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যঃ
ডেঙ্গু কেন হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের দ্বারা। এডিস ইজিপ্টাই নামক মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক। এডিস মশা কামড়ানোর চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে যে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশা ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে এডিস মশার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায়।
লক্ষণ বা উপসর্গঃ
উচ্চমাত্রায় জ্বর, শরীরে ঘামাচি মতো র্যাশ হওয়া (র্যাশ বুকের দিকে বেশি হয়ে থাকে), দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, রক্ত বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, কালো রঙের পায়খানা হওয়া, ওপর পেটে পানি চলে আসা ইত্যাদি।
এই জ্বরকে ‘ব্রেক বোন ফিভার’ বলা হয়ে থাকে। এই জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে ধরলে বা নাড়াচাড়া করলেই শিশু কেঁদে ওঠে, খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।
পরীক্ষা বা টেস্টঃ
* CBC (Complete Blood Count) – উচ্চমাত্রায় জ্বর হলে, শরীরে র্যাশ দেখা দিলে, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে দেরি না করে এই টেস্ট করাতে হবে। প্লেটিলেট কমে যাচ্ছে কিনা দেখতে হবে, প্লেটিলেট কাউন্ট দেড় লাখের কম হলে বুঝতে হবে রোগী ডেঙ্গুর দিকে যাচ্ছে।
* Dengue NS1 antigen- এই টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসাঃ
ভাইরাস জ্বরের মতই প্যারাসিটামল, তরল খাবার, প্রচুর পানি বা ফলের রস, ওরস্যালাইন রোগীকে খাওয়াতে হবে।
প্লেটিলেট কখন দিতে হয়?
প্লেটিলেট কাউন্ট ১০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে প্লেটিলেট দিতে হবে।
কখন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে?
প্লেটিলেট কাউন্ট ৩০,০০০ এর নিচে নেমে গেলে, বমি হলে, কালো রঙের পায়খানা হলে, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে, পানিশুন্যতা দেখা দিলে, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
সাবধানতাঃ
ডেঙ্গু রোগীকে কোন প্রকার পেইন কিলার এবং এস্পিরিন দেয়া যাবে না।
সচেতনতাঃ
বাড়ির আশেপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে, পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং ঘরে যেন মশা না ঢুকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে মশানাশক ওষধ বা এরোসল দিতে হবে এবং ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টানিয়ে শুতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বর আপাত দৃষ্টিতে সেরে গেলেও জীবাণু রয়ে যেতে পারে। একারণে আবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ হতে পারে। সাবধানতা আবশ্যক।
বিঃ দ্রঃ ডেঙ্গু টিকা নিয়ে অনেক ধরনের মতামত রয়েছে। তবে WHO এর তথ্য মতে বিশ্বে একমাত্র লাইসেন্স প্রাপ্ত টিকা হল Sanofi Pasteur এর Dengvaxia® (CYD-TDV)। পূর্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাক্তিই এই টিকা নিতে পারবে। বিশ্বব্যাপী এই টিকার ব্যবহার এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংশয় থাকায় শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।